অস্ট্রিক, কিরাত, ভেড্ডি, টিবেটো বার্মান, আলপাইন, কোল ভীল, আরবী, ফার্সী,তুর্কি পর্তুগীজ ইত্যাদি বিভিন্ন জনগোষ্ঠির সমন্বয়ে অভ্যুদয় ঘটে গাঙ্গের ব-দ্বীপে একটি জাতিগোষ্টীর-যে জাতির নাম বাংগালী জাতি। এ জাতির জন্ম লগ্ন থেকেই শাসিত-শোষিত হয়ে আসছিলো দেশী-বিদেশী রাজা-বাদশাহ ও সামন্তদের দ্বারা। তারা জীবনে কোন দিনই স্বচ্চলতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের মুখ দেখে নি। তাদের জীবন-যাপন ছিল অনেকটা ভূমিদাসের মতো। এ অবস্থা থেকে তাদের কোন দিন মুক্তি ঘটবে এমন কথা তারা স্বপ্নেও ভাবে নি। ভূমিজ সন্তান রাজা শশাংক ও পাল বংশের শাসনামলে তারা কিছুটা স্বস্তি পেলেও তা ছিল ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বল্পস্থায়ী। পাল রাজাদের পতনের পর অখন্ড বাংলার শাসনভার চলে যায় দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেন বংশের হাতে। এ বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন তুর্কি সৈনিক ইখতিয়ার উদ্দীন মোঃ বখতিয়ার খলজীর হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলে বাংলার শাসনভার চলে যায় তুর্কিদের হাতে। তারপর ইতিহাসের পথ ধরে ক্ষমতায় আসে বহিরাগত মুসলিম সোলতান, ক্ষমতায় আসে পাঠান-মোগল এবং সবার শেসে সামাজ্যবাদী ইংরেজ বেনিয়ারা। অর্থাৎ বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস নির্মম নিপীড়নের ইতিহাস, বাংলার ইতিহাস লাঞ্ছনা-বঞ্চনার ইতিহাস। গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের এতদ অঞ্চলের মাটি অত্যন্ত উর্বর। অল্প পরিশ্রমে এখানকার মাটিতে ফলে সোনার ফসল। এখানকার মানুষের গোয়াল ভরা ছিলো গরু, গোলাভরা ছিল ধান আর পুকুর ভরা ছিলো মাছ। কিন্তু তারপরও এখানকার মানুষের ছিলো না কোন রাজনৈতিক অধিকার, ছিলো না সামাজিক নিরাপত্তা। এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে প্রলুব্ধ হয়ে বিদেশীরা বার বার এ দেশে হানা দিয়েছে। লুন্ঠন করেছে এ দেশের সম্পদ। এমনকি হার্মাদ জলদস্যুরা এ দেশের নর-নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে আরকান এমনকি সুদূর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতো। অর্থাৎ এখানকার জনজীবন ছিলো স্পূর্ণ অনিরাপদ। তারপরও এখানকার জনগণ অসহায়ের মতো থেমে থাকেনি। মাঝে মাঝে এরাও প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে। সাঁওতাল বিদ্রোহ, কৈবর্ত বিদ্রোহ, তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা ইত্যাদি তার প্রকৃষ্ট প্রমান।১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজ ঈষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারী লর্ড ক্লাইভের সেনা বাহিনীর কাছে নবাব সিরাজ উদ দৌলা পরাজয় বরণ করেন সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে । দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একটা অংশ মনে করে সিরাজের পরাজয়ের সাথে সাথে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। আসলে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য নয় বরং সামন্ত যুগের অবসানই সূচিত হয় সিরাজের পতনের সাথে। সিরাজও ছিলেন বংশগতভাবে বিদেশী। তবে ইংরেজদের শাসনামলে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতবাসী তথা বাংগালরি মধ্যে ঘটতে থাকে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ। যার পরিণামে বৃটিশ খেদাও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। ১৯৪৭ সালে ভারত বর্ষ বিভক্ত হয়ে জন্ম নেয় দুটি রাষ্ট্র-ভারতীয় ইউনিয়ন ও পাকিস্তান। পাকিস্তান আন্দোলনে বাংলার মুসলান সম্প্রদায়ের আন্দেলন ছিল অবিস্মরনীয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে তাদের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়িত হবে এ ছিল বংলার জনগণের প্রত্যাশা ।কিন্তু প্রত্যাশা প্রত্যাশাই রয়ে গেলো। বরং শ্বত চর্মের শোষণ থেকে বাংগালী বাদামী চর্মের শোষণের শিকারে পরিনত হয়। সেই ১৯৪৯ সালে াাওয়ামী মুসলিম লীগ তথা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে শুরু হলো বাংগালীর স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলন। ১৯৫২ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে ঢাকার রাজপথে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে মিছিলের উপর। এতে শহীদ হন বরকত, সালাম, জব্বার, রফিক। সেই থেকে রাজনৈতিক মুক্তি আদায়ের সংগ্রাম তীব্রতর হতে শুরু করে। তখন থেকে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে বঙ্গবন্ধুর বিচরণ আন্দোলনে সৃষ্টি করে প্রচন্ড গতিবেগ। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা, ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় পাকিস্তানী শাসকবর্গের ক্ষমতার মসনদে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। অবশেষে বাংগালি জাতীয়তার পরিচয় দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে মুছে দেবার কু-অভিপ্রায়ে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চের কালো রাত্রে নির¯্র্র বাংগালিদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে বাংলার জনগণ রুদ্ররোষে ফুঁসে উঠে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ ম্স রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৯৭১ এর ১৬ ই ডিসেম্বর পাক বাহিনী আত্মসমর্পন করে মিত্রবাহিনীর কাছে। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। দুনিয়ার সর্বত্র পত পত করে উড়তে থাকে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
---০০০---
No comments:
Post a Comment